আজ মঙ্গলবার | ২৬ আগস্ট ২০২৫ | ১১ ভাদ্র ১৪৩২ | ২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ | সকাল ১১:০৫

সুবিধাবাদীদের নিয়ে বিব্রত বিএনপি

ডান্ডিবার্তা | ২৬ আগস্ট, ২০২৫ | ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

ডান্ডিবার্তা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কতিপয় নেতাদের আর্থিক সুবিধার লোভে অনেক আওয়ামী দোসর বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করেছে। যার কারণে এখন বিএনপিতে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বিএনপির সুবিধাবাদী ও হাইব্রিড নেতাদের কারণে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে এমনাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্রেষক মহল। যারা বিএনপিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদী হাইব্রিড নেতাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা সুবিধাবাদীদের ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। এমনকি দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ন্যূনতম মূল্যায়ন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এতে অসন্তোষ বাড়ছে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে। দুঃসময়ে মামলা-হামলার ভয়ে যারা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছিলেন, তারা এখন খোলস পালটে নানা কর্মে লিপ্ত; আবির্ভাব ঘটছে হাইব্রিডদেরও। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, এমনকি প্রশাসনিক দপ্তরে বিএনপির দাপুটে ‘হর্তাকর্তা’ হিসাবেও জাহির করছেন। এসব ব্যক্তির নানা কর্মকা-ের দায় বিএনপির ওপর চাপছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দলের ওপর। এদিকে দলে দুঃসময়ে অনেক নেতাই বিদেশে চলে যান। ছিলেন আরাম-আয়েশে। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দেশে ফিরে দলে ভিড়তে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। নিজেদের ‘নির্যাতিত’ নেতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। যদিও সুযোগসন্ধানী, সুবিধাবাদী ও হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে দলটির কেন্দ্রে। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাচ্ছে বিএনপি। অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে দলটি। অভিযুক্ত সুবিধাবাদীদের ‘বসন্তের কোকিল’ উল্লেখ করে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় লবিং-তদবিরসহ অপরাধের পাল্লা ভারি করছেন তারা (সুবিধাবাদীরা)। এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উজ্জীবিত বিএনপি। কেন্দ্রসহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলো নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মকা- নিয়ে ব্যস্ত আন্দোলন-সংগ্রামের ত্যাগী নেতারা। পিছিয়ে নেই সুবিধাবাদীরাও। আবার যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন-তারাই এখন তৃণমূলের ত্যাগীদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। দলীয় কার্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের অলিগলিতে এখন তাদের ব্যানার, পোস্টার শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে এসব নেতার পদচারণাও বাড়ছে। ভিড় করছেন বিভিন্ন লবিং-তদবির নিয়ে। অন্যদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর যেসব নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন, মামলা-হামলায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, এমনকি ঘরছাড়া হয়েছেন-তারা এখন কার্যত ‘অসহায়’। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাবাদীরা নানা কৌশলে বিএনপিতে সক্রিয় হচ্ছেন। থাকছেন মিছিল-মিটিংয়ের সামনের সারিতে। পাশাপাশি নানা সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও তারা দলে ভেড়াচ্ছেন। তাদের দিয়েই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে দলটির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছেন। বিভিন্ন কমিটিতে তারা আওয়ামী লীগের দোসরদের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রে এ নিয়ে দলটির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অনেকেই লিখিত অভিযোগও করছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা রাতে ভোট কাটার জন্য সহযোগিতা করেছে, সেসব দোসরকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। যারা আওয়ামী লীগের অবৈধ সংসদ-সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছেন। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা মনে করি, এই শ্রেণিটা চিহ্নিত। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবও এদের ব্যাপারে বারবার সতর্ক করেছেন। ব্যবস্থা নিয়ে দেখিয়েছেনও। অনেক পুরোনো নেতারও অনেক অনৈতিক কর্মকা-ের জন্য তিনি কিন্তু সাংগঠনিক শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। ছাঁকনি দিয়ে এসব আবর্জনা হিসাবে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, সংগঠন থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। যার জন্য তারা দলীয় কর্মসূচির বাইরে কোথাও যান না। তবে কিছু নেতা যারা বিগত দিনে দলের দুঃসময়ে কোথাও ছিলেন না, তারা এখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়েছেন। দলের নেতাদের শেলটারে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী আগের মতোই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। আর বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের মতোই আর্থিক কষ্টে আছেন, মানবেতর জীবনে আছেন। ভোলা জেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জানান, পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ ভোল পালটে এখন বিএনপি সেজেছে। তাদের দাপটে একসময় বিএনপি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না। এখন তারাই আবার বিএনপি হয়ে দাপট দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মও শুরু করেছে তারা। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা মামলা-হামলার শিকার স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী নেতাকর্মী। বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে অনেক বিএনপি নেতা দলের দুর্দিনে বিদেশে পাড়ি জমান। বিগত দেড় দশকে তাদের অনেকেই নিজেদের রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বিদেশে পাড়ি জমালেও ভালো ছিলেন। কখনো দেশের কর্মীদের খোঁজখবর নেননি। ৫ আগস্টের পর তারা দেশে ফিরে নির্যাতিত নেতা হিসাবে জাহির করছেন। অনেকেই পদ-পদবি বাগিয়ে নিতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো অবস্থা। অন্যদিকে যারা ১৭ বছর দলের জন্য রক্ত-মাংস পানি করেছেন, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, স্বজন হারিয়েছেন, তাদের বঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিদেশ ফেরতদের কেউ কেউ। রাজধানীর নয়াপল্টনে সুবিধাবাদীদের আনাগোনা বেড়েছে। অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীর অভিযোগ, সুবিধাবাদীদের কারণে তারা মাঝেমধ্যে নয়াপল্টনে যেতে পারছেন না। এ কারণে দলের দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় অনেক নেতা বিরক্ত হচ্ছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়। ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, বিগত দিনে যারা দলে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল অথবা দলের দুঃসময়ে আওয়ামী দালালি করেছে, সেই সুবিধাবাদীরা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগেরও যারা সরাসরি কমিটিতে ছিল, তাদেরও দলের মধ্যে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন কমিটি দেওয়া হচ্ছে, দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগ আমিও পেয়েছি। বিভিন্ন এলাকার ত্যাগী ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতারা বিএনপি হাইকমান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে এসব অভিযোগের অনুলিপি আমিও পেয়েছি। কিছু কিছু সত্যতাও পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো আসলে খুব দুঃখজনক, এরকম হওয়া উচিত নয়। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা মোটেও কাম্য নয়। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব সময় বলে আসছেন, দলের দুঃসময়ে মাঠে, আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিল, যারা নির্যাতিত হয়েছে, ভবিষ্যতে তারাই সামনে নেতৃত্বে আসবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিগত ১৭ বছর আন্দোলনে কার কী ভূমিকা-দলের কাছে এগুলো পরিষ্কার। সুতরাং এগুলো নিয়ে চিন্তা নেই। কারণ, তাদের কী অবদান, মনোনয়ন থেকে শুরু করে মূল্যায়ন-সবকিছু মোটামুটি পরিষ্কার হবে। অনেক শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে, বিগত বছরগুলোয় আন্দোলনে কার কী সক্রিয় ভূমিকা ছিল, সে বিষয়টি দলের নজরে আছে। আর এমনি তো সুবিধাবাদী লোক থাকবেই। সুবিধাবাদী রাজনীতিক আছেন, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী আছেন। আমরা তো ১৭ বছর আন্দোলন করেছি। এক-দুই মাসের আন্দোলন হলে কে কোথায় ছিল, সেটা খুঁজে বের করা সহজ ছিল। এই দীর্ঘ আন্দোলনে কার কী ভূমিকা, এগুলো মূল্যায়নে কিংবা মনোনয়নে অবশ্যই প্রতিফলিত হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নাম ভেঙে যারা অপকর্ম করছে, চাঁদাবাজি, দখলবাজি করছে, তাদের প্রতি জিরো টলারেন্স দেখানো হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এটা অব্যাহত আছে। কোনোভাবেই এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়তা নেই। আমাদের অগোচরে কেউ অপরাধ করে থাকতে পারে। কিন্তু এটা যখন আমাদের গোচরে আসছে, তখন দল সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। আর হাইব্রিড সব সময় একটু সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, তবে এ ব্যাপারে দল সতর্ক আছে। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাচ্ছি, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকেও তথ্য নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিএনপি জিরো টলারেন্স।




Your email address will not be published.

Comments are closed.


আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা
ফেসবুকে আমরা
পুরনো সংখ্যা
Copyright © Dundeebarta 2024
ডান্ডিবার্তা